,

প্রকৃতির বিরুপ প্রভাবে হারিয়ে যাচ্ছে শাপলা শালুক

মোঃ জুনাইদ চৌধুরী : শপলা আমাদের জাতীয় ফুল। সাদামাটা এ ফুল সবার প্রিয়। যেকোন ডোবা নালায় জন্ম নিয়ে সবার দৃষ্টি আকৃষ্ট করে। প্রকৃতির বিরুপ প্রভাবে শাপলা ফুলের সেই সমারোহ আর চোখে পড়ে না। দিনে দিনে শাপলা-শালুক যেন একেবারেই বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। আজ থেকে ১৫-২০ বছর আগেও বড় বড় দিঘীতে ও বিলের বুক জুড়ে শাপলা ফুলের দৃষ্টি নন্দন সৌন্দর্য ছিলো চোখে পড়ার মতো। সে শরৎকালে দিঘীতে ও বিলের বুক জুড়ে প্রকৃতি অন্য রকম সাজে সেজে উঠত। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখা যেত চারদিকে ফুটন্ত সাদা শাপলার সমারোহ। মনে হতো এ যেন শাপলার জগৎ। শাপলা ফুল শুধু পরিবেশ ও প্রকৃতির সৌন্দর্যই বৃদ্ধি করে তা নয় এর রয়েছে অনেক পুষ্টি গুণ। এছাড়া এ ফুলের গাছ শিকড় ও মাথা কিছুই ফেলে দেওয়ার মতো নয়। শাপলার নরম ডাঁটা, মাথা ও গোড়ায় জন্ম নেওয়া ড্যাপ এবং শালুক সবই মুখরোচক পুষ্টি সমৃদ্ধ খাদ্য উপাদান। মাছ-মাংস রান্নায় উৎকৃষ্ট তরকারি হিসেবে এর ডাঁটা বেশ জনপ্রিয়। শালুক আগুনে পুড়িয়ে কিংবা সেদ্ধ করে খাওয়া হয়। আগের দিনে শরতের শেষে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিলু জুড়ে শালুক তোলার ধুম পড়ে যেত। শালুক পোড়া গন্ধ এখনো প্রবীনদের শৈশবের কথা মনে করিয়ে দেয়। শাপলা, পদ্ম সাধারণত দিঘী বা বিলে ফুটে থাকে। তখন গ্রামের ছেলে-মেয়েরা সাঁতার কেটে এই ফুল তুলে আনত। শাপলাকে দুভাবে কেটে কেটে মালার মতো করে একজন অপরজনের গলায় পড়িয়ে দিত। রসবোধ সৌন্দর্য হারিয়ে যাচ্ছে মহাকালের অতল গহ্বরে। বিশেষজ্ঞদের মতে জলবায়ু ব্যাপক পরিবর্তনে আগের মতো সঠিক সময়ে বন্যা হচ্ছে না। এছাড়া আবাদি জমিতে অপরিমিত কীটনাশক ও রাসায়নিক সার প্রয়োগে অনেক শাপলা বীজ বা মাটির নিচে লুকিয়ে থাকা মা শালুক বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে নতুন করে শাপলার গাছ জন্ম হচ্ছে না। শরৎকাল শেষ হলেও বড় বড় দিঘী ও জলাশয়ে দেশের কোথাও সেই আগের মতো শাপলা-শালুকের দেখা মেলেনা। এ জলজ উদ্ভিদ আজ বিলুপ্তির পথে। এমন অবস্থা চলতে নরম কচি আর মচমচে এ ডাঁটা লবন ও তেঁতুল মাখিয়ে থাকলে আগামী ২০ বছরে শাপলার অস্তিত্ব কতটুকু টিকে মুখরোচক সবজি হিসেবে খাওয়ার মজাই আলাদা। এ থাকবে সেটাই এখন ভাববার বিষয়।


     এই বিভাগের আরো খবর